ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (ডিআইআইটি)
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তিতে যে যত বেশি সমৃদ্ধ, সে তত বেশি বিশ্বের
সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে। ব্যতিক্রম হলে পড়তে হবে পিছিয়ে। তাই শিক্ষাজীবন থেকেই
তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে স্নাতক পর্যায়ে তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর
যে কয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন
টেকনোলজি (ডিআইআইটি),যা আধুনিক শিক্ষার দিগন্তে স্বাবলম্বী শিক্ষার্থী গড়ার ক্ষেত্র।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অবস্থান ঢাকার ধানমন্ডিতে।
'প্রোভাইডিং কোয়ালিটি এডুকেশন উইথ ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড'
স্লোগানকে ধারণ করে ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করে ডিআইআইটি। এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান
ড. মো. সবুর খান, ড্যাফোডিল ফ্যামিলির গ্রুপ সিইও মোহাম্মদ নুরুজ্জামান এবং ডিআইআইটির
অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেনের সম্মিলিত নেতৃত্বে মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা
প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
ডিআইআইটিতে রয়েছে ৩টি বিভাগ। সেগুলো হলো ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
(বিবিএ), কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই), ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি
ম্যানেজমেন্ট (টিএইচএম), মাস্টার অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) এবং মাস্টার
অব ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট (এম.টি.এইচ.এম)। বিভাগগুলোতে
বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১,৮০৯ জন। তাঁদের জন্য আছে ৫৫ জন
অভিজ্ঞ শিক্ষক, যাঁদের চারজন এমফিল ও পনের জন পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং অধ্যয়নরত
আছেন। আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির উপকরণ সংবলিত শ্রেণিকক্ষে চলে পাঠদান কার্যক্রম।
একাডেমিক বিভাগগুলোর স্বতন্ত্রতা
বিবিএ: ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করা বিভাগটি একাডেমিক এবং
বাস্তবিক জ্ঞান প্রদানে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। প্রতি সেমিস্টারে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় স্থান করে নেয় এই বিভাগের মেধাবীরা। এ পর্যন্ত
দেড় হাজারের বেশি বিবিএ অ্যালামনাই রয়েছেন, যাঁদের প্রায় ৮০ শতাংশই দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তত্ত্বীয় জ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তবিক জ্ঞানের প্রয়োগেও গুরুত্বারোপ
করে বিভাগটি। তাই অধ্যায়নের পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট, তিন মাসের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ,
বিজনেস আইডিয়া এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাস্তব কর্মক্ষেত্রের
জন্য প্রস্তুত করা হয়।
সিএসই: গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে দক্ষ
ও সৃজনশীল মস্তিষ্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৯৯ সাল থেকে আমাদের এ পথচলা। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং,
ডেটা স্ট্রাকচার, অ্যালগরিদম, নেটওয়ার্কিং, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার
মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা অর্জনে বিভাগটি নিরলসভাবে কাজ
করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছে। তাঁদের
মধ্যে ২০ শতাংশ সফল উদ্যোক্তা, ১০ শতাংশ উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় এবং ৫০ শতাংশ দেশ-বিদেশের
নামকরা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি
ম্যানেজমেন্ট:
পর্যটন শিল্পে দক্ষ জনশক্তি গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ২০১৫ সালে বিভাগটির যাত্রা শুরু হয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় এই বিভাগের
শিক্ষার্থীরা প্রথম স্থান অর্জনসহ বরাবরই শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী এবং সুসজ্জিত ল্যাবের সমন্বয়ে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক হাতে-কলমে শিক্ষারও সুযোগ পাচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায়
সম্প্রতি 'চায়না পেইড ইন্টার্নশিপ' প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জনের
সুযোগ পেয়েছে। বিভাগটি ইতিমধ্যে বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেল এবং স্বনামধন্য ট্রাভেল এজেন্সির
সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে । এরই মাধ্যমে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা সহজেই ইন্টার্নশিপ
এবং পরবর্তীতে চাকুরির সুযোগ পাচ্ছে।
এমবিএ প্রোগ্রাম: দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার লক্ষে ২০১৫ সালে
এই প্রোগ্রামটি যাত্রা শুরু করে। একাডেমিক সাফল্য এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় এই বিভাগটির
স্থান এখন শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর সারিতে। পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী এখান থেকে সফলভাবে
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে কর্মক্ষেত্রে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। গত এক দশকে
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেশনাল এমবিএ প্রোগ্রামে ডিআইআইটির এমবিএ প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীরা
জাতীয় মেধা তালিকায় ধারাবাহিকভাবে শীর্ষস্থান অর্জন এমনকি ১০জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৪.০০
এর মধ্যে ৪.০০ অর্জন করে শিক্ষামন্ত্রী এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে সম্মাননা
গ্রহণ করে। এছাড়াও, ২৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ৩.৫০+ জিপিএ এবং ৮০% শিক্ষার্থী ৩.০০+
জিপিএ অর্জন করেছে- যা ডিআইআইট এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উভয়ের জন্যই এক ঐতিহাসিক অর্জন।
শুধু একাডেমিক জ্ঞানই নয়, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ক্যারিয়ার সহায়তা, আইটি
দক্ষতা, বাস্তব প্রেক্ষাপটের জ্ঞান, উপস্থাপন দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তাধারা উৎসাহিত
করার ক্ষেত্রেও শতভাগ শিক্ষাবৃত্তিসহ মেধাবী ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের শতভাগ
শিক্ষাবৃত্তিসহ আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে ডিআইআইটির এমবিএ প্রোগ্রাম বাংলাদেশের
ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থায় অনন্য ভূমিকা রাখছে।
অনন্য সুযোগ-সুবিধা
ডিআইআইটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, সুসজ্জিত
কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স ল্যাব, ক্যাম্পাসজুড়ে ওয়াই- ফাই, ক্যাফেটেরিয়া, প্রার্থনার
স্থান, আধুনিক অডিটোরিয়াম, আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থাসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা। 'ওয়ান
স্টুডেন্ট, ওয়ান ল্যাপটপ' সুবিধার আওতায় ভর্তি হলেই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়
ফ্রি ল্যাপটপ। প্রতিবছর গড়ে
প্রায় দুই লাখ টাকার স্কলারশিপ উচ্চশিক্ষা অর্জনে শিক্ষার্থীদের
সহায়তা করছে। ডিআইআইটির প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতক সম্পন্ন করার আগেই ড্যাফোডিল
ফ্যামিলির ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের যেকোনো একটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়।
সহশিক্ষা ও সামাজিক কার্যক্রম
শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করতে নিয়মিত সেমিনার,
ওয়ার্কশপ এবং ক্যারিয়ার ফেয়ার আয়োজন করে ডিআইআইটি। রয়েছে 'চেজ ইয়োর ড্রিম' নামক বিসিএস
প্রস্তুতি কার্যক্রম। 'হেল্পিং বার্ডস অব ডিআইআইটি'-এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন
জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমেও অংশগ্রহণ করে। শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে কার্যকর
আছে বিভাগভিত্তিক শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠন। যেমন বিজনেস অ্যান্ড
ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট, কালচারাল, রিসার্চ, সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার, স্পোর্টস, আইটি, প্রোগ্রামিং,
রোবোটিক্স এবং ট্যুরিজম সোসাইটি অব ডিআইআইটি ক্লাবসহ ১১টি ক্লাব ও সংগঠন। যা শিক্ষার্থীদের
দক্ষতা ও নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করেছে। এছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ডিআইআইটি
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণ, পথশিশুদের সহায়তা, রক্তদান এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
সপ্তাহ পালন করে।
বিশেষ আয়োজন
২০১৮ সাল থেকে প্রতি বছর 'আইটি ফেস্ট', অনুষ্ঠিত হয় যা সিএসই বিভাগের
একটি অন্যতম বড় আয়োজন। মাসব্যাপী এই আয়োজনে বিভিন্ন ইভেন্ট শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত
দক্ষতা ও জ্ঞানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সহায়তা করছে। পাশাপাশি দক্ষ প্রোগ্রামার তৈরির
লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত প্রোগ্রামিং ক্লাবের উদ্যোগে প্রতি মাসে আন্তঃবিভাগীয় প্রোগ্রামিং
প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতা থেকে নির্বাচিত ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন জাতীয়
এবং আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হ্যাকাথন,
আইসিপিসি, আইসিটি কার্নিভাল প্রতিযোগিতা। এছাড়া ডিআইআইটিতে বছর জুড়ে নানা রকম অনুষ্ঠান
যেমন বার্ষিক পিকনিক, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বসন্ত বরণ পিঠা উৎসব ইত্যাদি আয়োজন করা হয়।
সাফল্য ও অর্জন
সারা বিশ্ব যখন কোভিড মহামারিতে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল, তখনও অনলাইন
শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার ধারা অব্যাহত রেখেছিল ডিআইআইটি। এছাড়া ১৮টি আন্তর্জাতিক
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে ডিআইআইটি। যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক
বিভিন্ন সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ও কর্মকর্তাদের
প্রায় ১২০টির ও অধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের
লেখা ৫০টিরও বেশি বই সম্পাদনা ও প্রকাশ করা হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি শুধু
একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নয়, একটি সম্ভাবনাময় প্ল্যাটফর্ম। যেখানে শিক্ষার্থীরা তাঁদের
একাডেমিক ও ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা পায়। সে কারণেই ডিআইআইটির
প্রতিটি বিভাগ নিজস্ব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে দেশের প্রযুক্তি ও ব্যবসায় শিক্ষার ক্ষেত্রে
এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।